লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে, বাসায় ফেরার পথে পাথর ভর্তি ট্রাকের চাপায় নিহত (ডিএসবি) পুলিশের (এসআই) আব্দুল মতিন ও কনস্টেবল মজিবুল ইসলাম পুলিশ লাইনে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে জানাযা শেষে বিকালে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
এর আগে স্মৃতিচারণ আলোচনা শেষে বাংলাদেশ পুলিশের পতাকায় আচ্ছাদিত লাশের কফিনে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. মতিয়ার রহমান, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা, পুলিশ কর্মকর্তারাসহ সদস্যবৃন্দ, লালমনিরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আকমল হোসেন আহম্মেদ, লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোফাখখারুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষ জানাযায় উপস্থিত ছিলেন।
নিহত মতিন কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া এলাকার মৃত্য- জয়েন উদ্দিন সরকারের পুত্র এবং মজিবুল রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকার শেখ মাহামুদুর রহমানের পুত্র।
লালমনিরহাট পুলিশ লাইন চত্ত্বর থেকে পুলিশের এ্যাম্বুলেন্স যোগে (এস আই) আব্দুল মতিনের লাশ পাইকের ছড়ায় এবং কনস্টেবল মজিবুল ইসলামের লাশ মহিপুর এলাকার নিজ বাড়ীতে পৌঁছালে সেখানকার আশাপাশের মানুষসহ স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। নিজ নিজ এলাকায় দ্বিতীয় দফায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া মতিন ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে দুই দফায় পদন্নোতি পেয়ে (এস আই) হন। ৩২বছর ১মাস ১২দিন চাকুরি জীবনে বাহিনীতে বিশেষ অবদান রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তান রয়েছে।
২০১৯ সালে ২১ অক্টোবর লালমনিরহাটে যোগদান করে হাতীবান্ধায় ডিএসবিতে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া ১৯৭৩ সালে ৬ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া মজিবুল ১৯৯৩ সালের ২২ জুন কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০১৪ সালে ৭ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ থেকে লালমনিরহাটে যোগদান করে পরবর্তী ২০১৭ সালে ২ জানুয়ারি ডিএসবিতে হাতীবান্ধায় কর্মরত ছিলেন। তার কর্মকাল ছিল ২৭ বছর ৬ মাস ২৬ দিন। ব্যক্তিগত জীবনে মজিবুল স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানাযা পূর্বে আলোচনায় নিহত (এস.আই) আব্দুল মতিনের পুত্র নাজমুল ইসলাম ও মজিবুল ইসলামের স্ত্রীর বড় ভাই এসআই ফরহাদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
জানাযা পূর্ব স্মৃতিচারণে পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, হাতীবান্ধায় ডিএসবিতে কর্মরত মতিন ও মজিবুল ছিল তৎপর। তারা সোমবার আসন্ন ইউনিয়ন নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শেষে থানায় ফিরছিলেন। এ সময় ঘাতক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের খানের বাজার নামক স্থানে নিহত হন। এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক হয়ে চলাচলের পরামর্শ দেন পুলিশ সদস্যদের।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর নিহতের পরিবার এবং পুলিশ সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, রংপুর-লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কটির এমন কিছু কিছু বাঁক রয়েছে। যেগুলো মরণফাঁদের মতো। সংখ্যায় অনেক বেশি গাড়ী চলাচলের কারণে বর্তমানে মহাসড়কটির অবস্থা বেহাল। বিষয়টি স্থানীয় সড়ক বিভাগের মাধ্যমে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ মহাসড়কে যেন আর কাউকে এভাবে প্রাণ দিতে না হয়, সবাইকে সাবধানে চলাচল করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :