কক্সবাজারের লবণ চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা


সংবাদদাতা, কক্সবাজার প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২১, ৭:১৯ পূর্বাহ্ন / ৫৪৮
কক্সবাজারের লবণ চাষীরা লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা

কক্সবাজারের মহেশখালীর উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা লবণের ন্যায্য মুল্যে পাচ্ছে না। একটি অসাধু সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে লবণ আমদানীতে ব্যস্ত। মহেশখালীতে গঠিত হল “বাংলাদেশ লবণ চাষী বাচাও পরিষদ।” গঠিত পরিষদের দাবী মহেশখালীসহ বাংলাদেশের যে সকল জেলা উপজেলায় লবণ মাঠে লবণের চাষ হচ্ছে তাদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য দিন। অন্যতায় লবণ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে অনশন করবে।

দেশে বিপুল পরিমান লবণ উৎপাদন সত্ত্বেও একটি অসাধু সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে লবণ আমদানী করার কারনে দেশিয় লবণের মূল্য দিন দিন কমে যাচ্ছে। লবণ চাষী সহ প্রান্তিক লবণ ব্যবসায়ীদের মাঝে ধস নেমেছে লবণ বিক্রিতে। বর্তমানে নানা অর্থনৈতিক সংকটের মুখে প্রান্তিক লবণ চাষীরা। চরম হতাশায় এ শিল্পে নির্ভরশীল ৮০ হাজার প্রান্তিক লবণ চাষী সহ ৫ লাখ মানুষ। যারা দেশের মানুষের লবণের চাহিদা মিটিয়ে জীবন-যাপন করে থাকেন। ৭০ হাজার একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই শিল্প কক্সবাজারের মহেশখালীসহ উপকূলীয় উপজেলায় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ভাল নেই লবণ শিল্পের সাথে জড়িতরা।

লাগামহীন ভাবে লবণের দাম কমে যাওয়ায় খুবই ক্ষতিগ্রস্থ লবণচাষীরা। লবণের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার দাবীতে “লবণ চাষী বাচাঁও পরিষদ ” নামে একটি সংগঠনেে ইতিপূর্বে আত্ম প্রকাশ হয়েছে। “বাংলাদেশ লবণ চাষী বাচাও পরিষদ” এর আহবায়ক আলহাজ্ব সাজেদুল করিমের নেতৃত্বে লবণ চাষী বাচাও পরিষদের ব্যানারে দাবী তুলে ধরে মহেশখালীতে ইতিপূর্বে বেশকিছু মানববন্ধন, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, মাঠ পার্যায়ে এক মন লবণ উৎপাদন করতে ব্যয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সে লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। অথচ গত দুই বছর আগেও প্রতি মন লবণ বিক্রি হয়েছে ৫শ থেকে ৬শ টাকায়। এখন চাষীদের লাভ তো দুরের কথা গুনতে হয়েছে লোকসান। আর এ ক্ষতি’র জন্য চাষীরা দায়ী করছেন অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকে।

এ অবস্থায় প্রান্তিক লবণ চাষী ও মালিকদের দাবী লবণের মূল্য আগের মতই রাখা হউক। যাতে করে লবণ শিল্প বেঁচে থাকে আর এই শিল্পের সাথে জড়িতরা রক্ষা পায়। যদি দ্রুত সময়ে লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা না হয়, বিদেশ থেকে লবণের নামে সোডিয়াম সালপেট আমদানী করে এদেশের মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে। দ্রুত প্রান্তিক লবণ চাষীদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা না হলে মহেশখালী সহ সারা দেশে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্বারকলিপি লবণ শ্রমিকদের আমরণ অনশন সহ নানা কর্মসুচি পালন করা হবে বলে জানান বাংলাদেশ লবণ চাষী বাচাঁও পরিষদ।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে প্রধানমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

লবণ চাষী বাচাঁও পরিষদের সদস্য সচিব মহেশখালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক এহছানুল করিম জানায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মণ প্রতি লবণের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪’শ থেকে ৪’শ ৫০ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা।২০২০-২০২১ সালে ১৬০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়। কিন্তু মাঠে মণ প্রতি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৩শ টাকা। এখন প্রতি কেজি লবণের দাম পাচ্ছে ৪টাকা করে।

মহেশখালীর প্রান্তিক লবণ চাষী মোজাম্মেল হক জানান, মন প্রতি ৫’শ টাকা থাকা লবণ ১৮০ টাকায় নেমে যাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। আমি ঋণ নিয়ে এ চাষ শুরু করছিলাম কিন্তু এখনো পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারিনি। তার মতে এর জন্য দায়ী কিছু অসাধু মিল মালিক। যারা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ফেলেছে। আর চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও বেশি লাভের আশায় বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করে দেশি লবণের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতি সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী জানান, আগের বছরের লবণের দামের উপর নির্ভর করে চাষিরা অগ্রিম টাকা নিয়ে লবণের মাঠ করছে। এই অবস্থায় যদি ৫’শ টাকার লবণ ১৯০/- টাকা হয়, তাহলে চাষীদের মজুরীর টাকা পর্যন্ত উঠবেনা।

তিনি আরো বলেন, গত ৩ বছর বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করায় দেশে লবণের দাম ভাল ছিল। চাষিরাও সন্তুষ্ঠ ছিল। কিন্তু চাহিদা পূর্ণ থাকার পরেও ভ্যাট আর কর দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় বিদেশী লবণের সাথে দেশি লবণ মিশিয়ে বিক্রি করছে। আর তারাই লবণের দাম কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে চরম দূরাবস্থায় পড়েছে লবণ চাষী ও মালিকেরা। বিষয়টি ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন বলে ও জানান। কক্সবাজারের ৭ উপজেলা চকরিয়া,পেকুয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, রামু, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর প্রায় ৮০ হাজার লবণ চাষীর পাশপাশি এ শিল্পের সাথে ৫ লাখ মানুষ জড়িত। তাদের একমাত্র আয়ের উৎস লবণ চাষ। তাই লবণ চাষী ও মালিকদের ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে বাচিঁয়ে রাখতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।