কোটিপতি কাইয়ুমের অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদারকি সংস্থা


সংবাদদাতা, মহেশখালী (কক্সবাজার) প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২০, ২০২১, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন / ১৮৮
কোটিপতি কাইয়ুমের অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদারকি সংস্থা

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে জন্ম হলেও বর্তমানে কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা আলোচিত কাইয়ুম সওদাগরের অবৈধ সম্পদ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদ বন্ধের জন্য মোটা অংঙ্কের লবিষ্ট নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। কাইয়ুম সওদাগরের একটি সিন্ডিকেট অবৈধ আয়ের উৎস অনুসন্ধানে থাকা কয়েকটি তদারকি সংস্থার কাছে ধর্ণা দিচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তাদের টাকা দিয়ে মাঠে নামিয়ে এবং স্থানীয় সংবাদপত্রের কয়েকজনের কাছে হরহামেশাই যোগাযোগ করতে দেখা গেছে কাইয়ুম সওদাগরকে। তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত চলমান সংবাদ বন্ধ করতে মোটা অংকের মিশনে কাজ করছে প্রভাবশালী চক্রটি।

জানা গেছে, সরকার বিরোধী একটি পরিবারকে সাথে নিয়ে নিজের অবৈধ ও অপরিদর্শিত আয় জায়েয করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করা কায়েম সওদাগরকে খুঁজতে শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় পত্রিকায় করফাঁকি এবং সন্দেহজনক লেনদেনের সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে আয়কর বিভাগ ও কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা কাইয়ুম সওদাগরের বিস্তারিত তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। একটি সংস্থা ইতোমধ্যে তার বেশকিছু অবৈধ আয়ের উৎসের বিষয়ে খবরাখবর নিতে শুরু করেছে। সামান্য মাথায় ফেরি করে মাছ ব্যবসায়ি কিভাবে এত টাকার মালিক হলো তার রহস্য শীগ্রই খুলে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, আদম পাচার করে কাইয়ুম সওদাগর এখন অন্তত ১০ টি ফিশিং বোটের মালিক। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকি দিতে নগদ লেনদেনে জায়গার মালিক বনে গেছে। তার ১০ টি ফিশিং বোটে কয়েকটি ইয়াবার চালান সাগর পথে পাড়ি দিয়ে ৩ বছরে কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে জানা গেছে। অনুমোদনহীন অবৈধ টাকায় কেনা তার মালিকানাধীন বোটগুলো হলো এফবি কামরুল হাসান, তার বড় ছেলের নামে এফবি রিফাত, এফবি রফিকুল হাসান নামে ২ টি, ছোট ছেলে ফরহাদের নাম ২ টি ফিশিং বোট রয়েছে।

হঠাৎ কিভাবে এত টাকার মালিক বনে যায় এ বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে ২০১৮ সালের শেষের দিকে মানব পাচারকারী হিসাবে কাইয়ুম সওদাগরকে আটক করে কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ। কালো টাকার মালিক বনে যাওয়া কাইয়ুম আটকের পরপরই রাতে অদৃশ্য কারণে বেরিয়ে আসে থানা থেকে।

জানা গেছে, কোন ব্যাংকে একাউন্ট নেই অথচ কোটিপতি। লেনদেন মাসে কোটি টাকার কাছাকাছি কিন্তু লিখিত কোন ডকুমেন্ট রাখার প্রয়োজন পড়েনা। পড়লেও সামাল দিতে রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় ছোট খাটোও সামান্য মাছ ব্যবসায়ী থেকে বড় বহদ্দারের উপমা ছাপিয়ে এখন কোম্পানি। চলাচল দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি কোটি টাকার মালিক। কেউ বলে বহদ্দার, কেউ বা সওদাগর, অনেকের কাছে কাইয়ুম কোম্পানি। মাছ ব্যবসা থাকলেও নিজের দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই। বছরের পর বছর বেকার জীবন। পরে ছোট খাটোও খুচরা মাছ বিক্রি করতেন। এখন তিনি কোটিপতির কাতারে। চলাফেরা আলিশান না হলেও তকমা লাগিয়েছেন বড় মাফের সওদাগর হিসেবে।

এছাড়া নিজ ভূমি মহেশখালী উপজেলার পৌরসভার চরপাড়ায় নিজ এলাকায় নতুন করে তৈরি হচ্ছে ৭০ লাখ টাকায় ফিশিং বোট। উক্ত ফিশিং বোটের আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকার উপরে। এছাড়াও রয়েছ যৌথ মালিকানায় রয়েছ আরো ৪ টি ফিশিং বোট যার মূল্য ২ কোটি টাকার উপরে হবে।

এছাড়া রয়েছে পৌরসভায় ৯ নং ওয়ার্ড চরপাড়ায় কিনেছে ৮০ শতক জমি, কলাতলিতে রয়েছে আরো ৪ শতক জমি যার আর্থিক মুল্য উভয় জমির ১ কোটি টাকার কাছাকাছি। চট্টগ্রামে স্ত্রীর নামে রয়েছে প্লট। স্ত্রীর বড় ভাইয়ের নামে কিনেছে প্রাইভেট কার। একটি জাতীয় পত্রিকাকে কাইয়ুম সওদাগর ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ধার দিয়েছে বলে স্বীকারও করেছেন। ধার দেয়ার খবরে আলোচনায় আসে কাইয়ুম সওদাগর।

বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নজরে আসলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা নিয়ে রীতিমতো তুলোধুনো চলছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে। কম সময়ে কিভাবে এত টাকার মালিক হলো সে রহস্য উদঘাটনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও আয়কর বিভাগের আরো তৎপরতা বাড়ানো জরুরী। ধরা পড়ার ভয়ে ব্যাংকিং লেনদেন না করায় তাকে ঘিরে রহস্যের দানা বাঁধছে খোদ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। তার মোবাইল ট্রেকিং করে কাদের সাথে তার অবৈধ লেনদেন তা বের করা জরুরী।

এ বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক চট্টগ্রামের সহকারী উপ-পরিচালক মোঃ শরিফ উদ্দিন বলেন- কাইয়ুম সওদাগরের অবৈধ সম্পদ অর্জন বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ও তার আয়ের উৎস বিষয়ে তদারকি করা হবে।