একাধিক অনিয়মের অভিযোগ, অবাধ্যতা, গুরুতর অসদাচারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন বিরোধী কার্যক্রম এর অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে বরখাস্ত এবং দু’জনকে চাকুরি থেকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট।
বরখাস্তকৃত শিক্ষক হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল ফজল। অপসারণকৃত শিক্ষকদ্বয় হলেন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, নতুন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রফেসর ড. মোঃ মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল জব্বার, ড. নিহার রঞ্জন সিংহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন, প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগিরর অন্যান্য সকল সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য বর্তমানে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন এনডিসি অনলাইনে যুক্ত থেকে এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল গণমাধ্যমকে বলেন, এই ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন থেকে শুরু করে কোনো কার্যক্রমেই তাঁদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন, সেটাও তাঁদের দেওয়া হয়নি। তাঁরা তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন, সেটাও আমলে নেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রশাসন যে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের কাগজপত্র হাতে পেলে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ ও ২ জানুয়ারি পাঁচ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট সমাধানসহ পাঁচ দফা দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের।
এর প্রায় ৯ মাস পর গত ১৩ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে ওই তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
ওই চিঠির জবাব দেওয়া হলে গত ৯ নভেম্বর আরেকটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২৩ নভেম্বরের ওই চিঠির জবাব দেওয়া হলে ২৪ নভেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও চিঠি দিয়ে ১০ ডিসেম্বর হাজির হয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করার জন্য ওই তিন শিক্ষককে ডাকা হয়। পরে ১৩ ডিসেম্বর বিশেষ সিন্ডিকেট ডেকে আবারও তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারি ওই চিঠির জবাব দেন শিক্ষকেরা।
এরপর ১৮ জানুয়ারি সোমবার সিন্ডিকেট করে চূড়ান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় প্রশাসন। গত মঙ্গলবার সকালে চাকরিচ্যুত ও অপসারণ করার আগে চূড়ান্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ ওই তিন শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ২১ জানুয়ারি বেলা দু’টার মধ্যে ওই চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হলে ওই কর্মচারী ভবিষ্যতে অন্য কোনো সরকারি চাকরিতে অথবা কোনো আইন বলে বা আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত কোনো সংস্থায় নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে চাকরি থেকে অপসারিত হলে কর্মচারী পুনর্নিয়োগ লাভের অযোগ্য হবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :