জমে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচন। মাঘের শীতকে হার মানিয়ে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
এ পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী।
এবারের পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএমের মাধ্যমে। অনেক ভোটার কোনোদিন ইভিএমে ভোট প্রদান না করায় তাদের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এছাড়া কতটুকু সঠিক ভোট হবে তা নিয়ে প্রার্থীরাও দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন।
উত্তরের জেলা উন্নয়নে অনেকটাই পিছিয়ে আছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা। কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি গত কয়েক দশকে। সততার সঙ্গে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করবে এমন একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে চান পৌরবাসী। প্রতিদিন প্রচার-প্রচারণায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা, তবে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থীকে বেশি দেখা যচ্ছে মাঠে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও নয়জন সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পৌরসভার অলিতে গলিতে মাইক দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারণার কাজ চলছে। আবার প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় ঝুলছে তাদের ছবিযুক্ত পোস্টার। পৌরসভার সব ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
অন্যদিকে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) আনজুমান আরা বন্যা দলীয় নেতাকর্মী ও আমজনতাকে নিয়ে উঠান বৈঠক, বাজার, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
অপরদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন অনেক এগে থেকে।
যেকোনো ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন নির্বাচন অফিস।
হাজীপাড়া এলাকার ভোটার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর প্রথম ভোটার হয়েছি তবে এর আগের নির্বাচনগুলোও দেখেছি। অনেকেই নির্বাচনের আগে নানা ধরনের আশ্বাস দেন কিন্তু ভোটে জয় পাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ-খবর থাকে না। সেজন্য এবার বুঝে শুনে একজন যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবো।
কলেজপাড়া এলাকার লিলি বলেন, কোনো প্রার্থীর কাছে কোনো সময় টাকা পয়সার জন্য যাবো না, তবে যেই নির্বাচিত হোক তার কাছে একটাই প্রত্যাশা তারা যেন পৌরসভার উন্নয়নের কথা ভেবে কাজ করেন। ঠাকুরগাঁও পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি গত কয়েক দশকে। তবে এবার যে নির্বাচিত হবে তার উচিৎ হবে, পৌরবাসীকে একটি মডেল পৌরসভা উপহার দেয়া।
খালপাড়া এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন এলে কাউন্সিলর-মেয়র প্রার্থীদের দেখা যায়, নির্বাচন শেষ হলে আর দেখা মিলে না তাদের। তখন তারা ভোটে জিতে আল্লা/ভগবান হয়ে যান। আমরা যারা সাধারণ ভোটার তারা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হই। আর এ কারণে আমাদের ভোটের প্রতি দিনদিন অনীহা।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, আপাতত খুবই ভালভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছি। নির্যাতিত বিএনপির কর্মীরা আমাকে জয়ী করার জন্য কাজ করছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো ইনশাল্লাহ।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনজুমান আরা বন্যা বলেন, বিএনপি প্রার্থীকে দেখলে পৌরসভার ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে কারণে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপির কর্মীরা। পৌরবাসীর উন্নয়নের জন্য অবশ্যই দলীয় প্রার্থীকে মানুষ ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা রিটার্নিং অফিসার জিলহাজ উদ্দিন বলেন, এই পৌরসভায় এবার ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কি না তা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা হচ্ছে। দু’একদিনের মধ্যে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদানের প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :