জামালপুরে আকরাম বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী


সংবাদদাতা, জামালপুর প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৬, ২০২১, ২:০৩ অপরাহ্ন / ৪৪৫
জামালপুরে আকরাম বাহিনীর তাণ্ডবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

জামালপুরে সামান্য সিদ্ধ ডিম বিক্রেতা আকরাম হোসেন এখন শত কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। আর এই সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে গ্রামের নিরীহ মানুষের উপর। যা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীও। অব্যাহত তাণ্ডবে গ্রামের মানুষগুলো অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও তার কালো টাকার প্রভাবে কেউ বিচার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ঢেংগারগড়ে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় এমন তথ্য।

জানা গেছে, আকরাম হোসেন একসময় ঢেংগারগড় বাজারে ডিম বিক্রি করতেন। অভাব-অনটনের সংসারে বাধ্য হয়েই জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। সেখানে গিয়ে জাহাজ ভাঙার শ্রমিকের কাজ শুরু করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, জাহাজের ভাঙা টুকরা যেন আলাদিনের চেরাগে পরিণত হয় আকরামের কাছে। রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান তিনি। চট্টগ্রামের স্থানীয় এক নারীকে বিয়েও করেন তিনি।

এদিকে এলাকায় তার প্রভাব বিস্তারের জন্য গড়ে তুলে নিজস্ব বাহিনী। অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে এই বাহিনী দিয়ে মানুষের জমি দখল, তার কথার অবাধ্য হওয়া ব্যক্তিদের মারধর, বাড়ি-ঘরে তাণ্ডব চালিয়ে ভাঙচুরসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। গত তিন বছরে আকরাম বাহিনীর হাতে অন্তত ১০ জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। আকরাম বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার ভুক্তভোগীরা আজও কোন বিচার পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

শরিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য শামীম হোসেন বলেন, প্রতিবছরই আ্করাম বাহিনীর জন্য এলাকায় বড় ধরনের মারামারি হানাহানির ঘটনা ঘটে। তার বিরুদ্ধ কয়েকটি মামলা রয়েছে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ গোদাশিমলার চান নায়েব, হামিদপুরের আল আমিন,মমতা, লাইলী, লুৎফাকে মারধর করেছে আকরামের সন্ত্রাসী বাহিনী। আমরা এই আকরামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

গোদাশিমলা বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, আকরামের সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাননা। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। গ্রামে তার অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কয়েকবার মানবন্ধনও হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। আমরা এই আকরাম বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি চাই।

শ্যামপুর গ্রামের বিল্লাল বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই যেটা আকরাম করে না। জমি দখল, সালিশ বাণিজ্য, মাদক সেবনসহ সবধরনের অপকর্মে লিপ্ত আকরাম। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি আমরা। আমরা এই এলাকায় তাকে আর দেখতে চাই না।

ঢেংগারগড় এলাকার মুরাদ হোসেন বলেন, আমরা চাই, দুদক আকরামের অবৈধ সম্পদের উৎস অনুসন্ধান করুক এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, মাদক কারবারের সঙ্গে আকরামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তা না হলে রাতারাতি কোন ব্যক্তি শত কোটি টাকার মালিক হতে পারে না। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এসব সচেতন ব্যক্তিরা।

অন্যদিকে বেশ ক’জন ভুক্তভোগী বলছেন, আকরামের সঙ্গে পুলিশের ঘনিষ্ঠতা থাকায় একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আকরাম ও তার বাহিনী সাধারণ মানুষকে নানাভাবে ক্ষতি ও হয়রানি করে আসছে। অথচ তারা কোন বিচারপাচ্ছে না।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, আকরামের অতীতের যে অবস্থা ছিল। আর বর্তমানে তিনি যেভাবে ফুলে ফেপে বটগাছ হয়ে গেছে তা আসলেই রহস্যজনক। আমি জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে অনুসন্ধানের পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দুদককে অনুরোধ করছি।

এসব বিষয়ে আকরাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলাকার একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে। আমি চট্টগ্রামের একজন ঠিকাদার। আমার সব সম্পদের হিসাব রয়েছে। একটি পক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব করছে।