গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। আহত হয়েছে ৫১৩ জন। নিহতের মধ্যে ৫১ শিশু ও ৭৬ জন নারী। নভেম্বর মাসের তুলনায় ডিসেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা কমলেও বেড়েছে প্রাণহানির সংখ্যা। ডিসেম্বর মাসে ৪১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত হয়েছিল।
রবিবার (৩ জানুয়ারী) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০২টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৬৪ জন এবং আহত ৫১৩ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৬, শিশু ৫১। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৭ জন, যা মোট নিহতের ৩১.৬৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৪.৩২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৮ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৭.৫৮ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৪ জন, অর্থাৎ ৯.৪৮ শতাংশ।
এই মাসে পাঁচটি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন ও ১২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯জন, আহত হয়েছেন ৪ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় বাস যাত্রী ১৮, ট্রাক যাত্রী ১৩, পিকআপ যাত্রী ১১, লরি যাত্রী ৭, ট্রাক্টর যাত্রী ৫, মাইক্রোবাস যাত্রী ৯, প্রাইভেটকার যাত্রী ৭, সিএনজি যাত্রী ১২, ইজিবাইক-অটোরিকশা যাত্রী ৬০, নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-বোরাক-টেম্পু যাত্রী ২৭, টমটম-ভ্যান ৬, বাইসাইকেল আরোহী ৫, রিকশা-রিকশাভ্যান যাত্রী ৯ জন নিহত হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ১ জন, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ১ জন, পুলিশ সদস্য ৫ জন, সেনাসদস্য ২ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১৩ জন, পল্লী চিকিৎসক ৩ জন, ডাক পিওন ১ জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ১ জন, মানসিক প্রতিবন্ধী ৪ জন, স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক ৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ১১ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮ জন, পোশাক শ্রমিক ৯ জন, ইটভাঙা শ্রমিক ৩ জন, ট্যাঙ্ক লরি শ্রমিক ২ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ৪২ জন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৮ জন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬৯ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১২৪টি জাতীয় মহাসড়কে হয়েছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩০.৮৪ শতাংশ। এছাড়া ১২৯ টি দুর্ঘটনা হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে, শতাংশে যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.০৮ শতাংশ। ১০৪টি দুর্ঘটনা হয়েছে গ্রামীণ সড়কে, যা শতাংশে ২৫.৮৭, ৪২টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে (ফেরিঘাট, নদীর তীর)১০.৪৪ শতাংশ, ৩টি (০.৭৪%) সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যানে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এই বিভাগে ১১৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৩৮ জন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা হয়েছে রংপুর বিভাগে। এই বিভাগে ২০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৮ জন। একক জেলা হিসেবে টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬টি দুর্ঘটনায় এই জেলায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম পিরোজপুর জেলায়। ২টি দুর্ঘটনায় এই জেলায় একজন নিহত হয়েছেন।
এসব দুর্ঘটনার প্রধান প্রধান কারণ হিসেবে যেসব বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, গাড়ির বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি
সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ফাউন্ডেশন ১০টি সুপারিশ করেছে। তার মধ্যে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি, পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :