বগুড়ার চারমাথা রণক্ষেত্র : ভাঙচুর-আগুন-গ্রেফতার


সংবাদদাতা, বগুড়া প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২১, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন / ৩৬২
বগুড়ার চারমাথা রণক্ষেত্র : ভাঙচুর-আগুন-গ্রেফতার

বগুড়া জেলা মোটর মা‌লিক সমিতি’র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারদলীয় দু’পক্ষের সংঘর্ষে চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পাঁচটি মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলি ছুঁড়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারী) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক সমিত ‘র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতিমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তার হেফাজতে চারমাথা বাসটার্মিনাল এলাকায় রাখেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথায় এলাকায় গিয়ে আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দেন। খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় জড়ো হয়ে যেকোনো মূল্যে তারা মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেয়।

খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেয়।

আমিনুল গ্রুপের লোকজন লাঠি মিছিল শুরু করলে মোহন গ্রুপের নেতাকর্মীরা সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পরে মোহন গ্রুপের লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের বেরিকেড ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করে। তারা এলোপাথাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলের নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

ভাঙচুরের ছবি তোলার সময় বেসরকারী টিভি চ্যানেল জিটিভি’র ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়কটি দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর আমিনুল গ্রুপ চারমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরও হটিয়ে দেয়। চারমাথা এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।