বরিশালে এক ছাত্রকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহত ছাত্রের নাম রেজাউল করিম রেজা। রেজা ২৪নং ওয়ার্ডের হামিদ সড়কের বাসিন্দা ইউনুস মিয়ার ছেলে ও বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র।
এদিকে বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহিসহ রেজাউল করিম রেজাকে নির্যাতনে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবিতে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। নগরীর সাগরদি এলাকায় প্রায় দেড়ঘণ্টা যাবত লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন ২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এ সময় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে দুই পাশে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ধান গবেষণা রোডে এসআই মহিউদ্দিন মাহির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালান তারা।
পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন তারা।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ২৪নং ওয়ার্ড সভাপতি নাজমুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারেকসহ স্থানীয়রা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন।
রেজাউল করিম রেজা পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে রবিবার (৩ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ইমেইল বার্তায় দাবি করা হয় পুলিশের নির্যাতনে নয়, রেজার বাম পায়ের সংযোগস্থলে ক্ষত ছিল। সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েই তার মৃত্যু হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়- হাজতি আসামি রেজাউল করিম রেজা ২৪নং ওয়ার্ডের হামিদ সড়কের বাসিন্দা ইউনুস মিয়ার ছেলে। শনিবার রাত ১২টা ৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ সংক্রান্তে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ২৯ ডিসেম্বর রেজাউল করিম রেজাকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং-৭১, জি আর-৮৫৩/২০, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) এর ১৪(ক)/১৯(ক) রুজু করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ৩০ ডিসেম্বর আসামিকে বিধি মোতাবেক আদালতে পাঠান। আদালতের আদেশে ওই দিনই তাকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ তাকে বুঝে নেন (তার হাজতি নং- ৬৬৩১/২০)। কারাগারে পাঠানোর ২ দিনেরও অধিক সময়ের পর ১ জানুয়ারি রাতে ওই আসামি কারা অভ্যন্তরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিকভাবে কারা হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়।
অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেবাচিম হাসপাতালের প্রিজন সেলের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীদের মাধ্যমে তাকে প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যু সংক্রান্তে কোতোয়ালি মডেল থানায় অপমৃত্যু মামলা নং-২/২১, রুজু করা হয়।
প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, সে পূর্ব থেকেই এলাকায় মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত ছিলো এবং ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্তে একাধিক মামলা রুজু হয়েছিলো। তার শরীরের বাম পায়ের পাশের কুচকিতে ক্ষত ছিলো। ১ জানুয়ারি ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
উক্ত ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তারের পর পুলিশ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতে পাঠায়। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কিছুই করা হয়নি।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশি নির্যাতনের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নাই। তার শরীরের ক্ষতস্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এরপরও বিষয়টি তদন্তের জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান উপ-পুলিশ কমিশনারকে (দক্ষিণ) সভাপতি করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
স্বজনদের দাবী, রেজাউল করিম রেজা বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র। পুলিশ তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এসআই মহিউদ্দিন মাহিসহ নির্যাতনকারী সব পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :