মজাহার আলীর জীবনযুদ্ধ চলছেই


সংবাদদাতা, লালমনিরহাট প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৮, ২০২১, ৬:০৭ পূর্বাহ্ন / ২১৭
মজাহার আলীর জীবনযুদ্ধ চলছেই

লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলোকদিঘি গ্রামের মজাহার আলী (৮৫)। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল থাকায় বৃদ্ধ বয়সেও এসে তৈলের ঘানি টানতে হচ্ছে। জানা গেছে, ৫ ছেলে-মেয়েসহ ৭সদস্যের সংসারে ভরণ-পোষণ করতেই তার অর্জিত টাকা শেষ। মজাহার আলীর ছেলে আমিনুল ও আজিজুল বিয়ের কিছুদিন পর আলাদা হয়ে যায়। ফলে তাঁর সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। মজাহার আলীর ৩মেয়ে মজিদা বেগম, মোর্শেদা বেগম ও কুলছুমকে বিয়ের সময় যৌতুকের টাকা গুনতে হয়েছিল, তাতে তিনি একবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন।

মজাহার আলী বর্তমানে কিভাবে দিন যাপন করছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় ছেলের তৈরী করা ঘরের একটি রুম তাঁকে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে। মজাহার আলী তাঁর স্ত্রীসহ কোন মতে সেখানে নিদ্রাযাপন করেন। মজাহার আলীর এ পেশার কথা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন যে, দীর্ঘ ৬০বছর হয় তিনি এই কাজ করে আসছেন, ১০বছর বয়সে তার বাবার সাথে কাজ করতেন। বাকী ৫০বছর তিনি নিজেই এ কাজ করে আসছেন। আশেপাশের গ্রাম ও হাট-বাজার থেকে বাকীতে সরিষা কিনে তৈল তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন।

মজাহার আলী বলেন, ১কেজি সরিষার তৈল এবং খৈয়ল বিক্রি করে ২শত থেকে ২শত ৫০টাকা। এ দর সরিষা আমদানি বেশি হলে অনেক কমে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে ছনের চালায় ঘরের স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি তৈলের ঘানিটি। গ্রাম্য ভাষায় সেটিকে বলা হয় তৈলগাছ। বর্তমানে সেখানে স্ত্রীর সহযোগিতায়, গরু দ্বারা ঘানি টানছেন তিনি। সহায় সম্বল বলতে পৈত্রিকভাবে পাওয়া বাড়ি ভিটার ৫শতক জমি যেখানে টিনের তৈরী ১টি ঘর এবং তৈল গাছটি দেখা যায়। মজাহার আলীর বর্তমানে যে গরুটি রয়েছে তা প্রায় কর্ম অক্ষ্যম। নতুন একটি গরু কিনবে সে টাকাও জোটেনা তাঁর। একটি গরু কেনার টাকা সহযোগিতা পেলে, যা দিয়ে ঘানি টেনে নিস্কৃতি পেতে পারেন অসহায় মজাহার আলী ও তাঁর তেলী পরিবারের সকল সদস্য। মজাহার আলীর কাছে খাঁটি সরিষার তৈল কিনে চরখাটামারী এলাকার মোঃ আসাদুল হক (৩৫) তিনি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করে এবং সাথে কবিরাজিও করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ইতিপূর্বেই ধোপা, নাপিত, কুলি ও তেলী শ্রেণি-পেশার তালিকা সমাজসেবা অধিদপ্তরে দিয়েছেন। মজাহার আলীর নাম আছে কিনা সঠিকভাবে বলতে পারেননা।

কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বলেন, ইতিপূর্বে এ রকম শ্রেণির পেশার যারা আছেন তাদের তালিকা ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। কিন্তু তার নাম আছে কি না সে বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।