রাঙ্গুনিয়ায় স্ত্রীর গায়ে আগুন, পোড়া চামড়া টেনে তুলেছেন পাষণ্ড স্বামী!


সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৯, ২০২০, ৭:১৫ পূর্বাহ্ন / ১৭৫
রাঙ্গুনিয়ায় স্ত্রীর গায়ে আগুন, পোড়া চামড়া টেনে তুলেছেন পাষণ্ড স্বামী!

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যৌতুক  ও স্বামীর পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় ইয়াসমিন আক্তার সুইটি (২৬) নামে এক গৃহবধূর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন পাষণ্ড স্বামী। নির্মম এ নির্যাতন চোখের সামনে দেখার পর থেকে পাঁচ বছরের ছেলে রাফি মুল্লাহর এখন প্রায় বাকরুদ্ধ। ঘাতক স্বামী সলিমুল্লাহ রাফেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সুইটির পরিবারের অভিযোগ, দগ্ধের পর সুইটিকে বাসায় আটকে রেখে রাতে শরীরের পোড়া চামড়াও টেনে-টেনে তুলেছেন তার স্বামী।

এদিকে নির্যাতিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শঙ্কর পাল জানান, সুইটির শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। তাকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে গেছে। ঘটনাটি খুব দুঃখজনক।

সুইটির বাবা হারুন অর রশিদ ও ছোট ভাই রবিউল হোসেন মুন্না জানান, তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া চন্দ্রগোনা লিচুবাগান এলাকায়। আর সুইটির স্বামী সলিমুল্লাহ রাফেলের বাড়ি চন্দ্রঘোনা পূর্ব কোদালা গোয়ালপুরা এলাকায়। পাঁচ বছরের ছেলে রাফি মুল্লাহকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন সুইটি। সাত বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। তার স্বামী রাফেল প্রথমে ইট বালুর ঠিকাদারি করতেন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ায় কিছুদিন তিনি বেকার ছিলেন। এরপর থেকে সুইটিকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী সুইটি উপর অমানবিকভাবে নির্যাতন চালাত। পরে তাকে ইন্টারনেট ক্যাবল ব্যবসায় দেয়া হয়।

সুইটির বাবা জানান, মাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা ইনকাম করত রাফেল। তারপরও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিত। পরে আর ঋণ পরিশোধ করত না। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে ঋণ পরিশোধ করার জন্য চাপ দিত আমার মেয়েকে। আমার বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করত সুইটি। ইতোমধ্যে ওর মাধ্যমে এক থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছে রাফেল। বেশ কিছুদিন ধরে রাফেল নিয়মিত বাসায় বাজারও করত না, রাত করে বাসায় ফিরত। আর তার ফোনে বিভিন্ন মেয়েদের কল, মেসেজ আসত। এইসব বিষয় নিয়ে সুইটির সাথে তার ঝগড়া ও কথা-কাটাকাটি হতো। এ কারণে রাফেল ওকে মারধরও করত।

তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রুমের দরজা বন্ধ করে মোটরসাইকেলের পেট্রোল সুইটির গায়ে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় রাফেল। পরে নিজেই কাঁথা দিয়ে শরীর ঢেকে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সারারাত দগ্ধ অবস্থায়ই রুমে আটকে রেখেছিলো সুইটিকে। ফোন না থাকায় কাউকে খবর দিতে পারেনি। যদি কাউকে বাসায় ডেকে আনে তাকেও জবাই করে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এতো নির্যাতন করেও ক্ষান্ত হয়নি রাফেল। রাতে দগ্ধ সুইটির শরীরের পোড়া চামড়াগুলো টেনে-টেনে তুলেছে তার স্বামী।’

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে সুইটির ফোন পেয়ে আমরা তার স্বামীর বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে ওকে উদ্ধার করি। পরে উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার বিকেলে সুইটিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা।’