‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ আইসিটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে


তথ্য প্রযুক্তি প্রতিবেদক, অধিকার কণ্ঠ প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৬, ২০২০, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন / ২৬৭
‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ আইসিটিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে

বিশ্ব জুড়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্বালে বাংলাদেশ সরকার দক্ষ কর্মীবাহিনী সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। এরই পরিক্রমায় সারাদেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি সরকারি ভাবে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ, তৈরী হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।

২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকার এর হাত ধরে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অগ্রযাত্রা, যার সুফল হাতেনাতে পাচ্ছেন দেশের জনগণ। করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব যখন আক্রান্ত, এর মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূর দৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে এই প্রথম মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ ভারতের থেকে এগিয়ে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ)। এই মহামারিতে অনেক খাতেই যখন মানুষ চাকুরি হারাচ্ছেন তখন বিশ্ববাজারে কদর বাড়ছে ফ্রিল্যান্স কর্মীদের। বিশেষ করে সারা পৃথিবীতেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেস্টা হিসেবে আউটসোর্সিং বা অন্য দেশ থেকে কাজ করিয়ে নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে বেড়ে চলেছে ফ্রিল্যান্সারদের পারিশ্রমিক ও সামাজিক মর্যাদা।

বাসায় বসেও ইন্টারনেট ব্যবহার করে অফিস করার ট্রেন্ড চালু করেছে কোভিড-১৯। তবে হোম অফিসের এই ধারণা কতটা উপযুক্ত তা অনেক আগেই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা। করোনা মহামারির মাঝে মুলধারার চাকরির বাজার এখনো পুনরুদ্ধার না হলেও আউটসোর্সিং কাজের সাথে জড়িতদের আধিপত্য ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ফ্রিল্যান্সিং সেবার সাথে জড়িত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ দক্ষ কর্মী নিজেদের আয়ের পাশাপশি নতুনদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করছেন।

আউটসোর্সিং এর এই অপার সম্ভাবনাময় খাত ও আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ইতোমধ্যেই দেখেছে সাফল্যের মুখ। দেশের যুবসমাজকে আইসিটি খাতের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরির প্রয়াসে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে পরিচালিত লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৪০ হাজার তরুণকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের ১৫টি লটের মধ্যে সুশীলন ও সফটসেল সল্যুশন লিমিটেড এর আওতায় পরিচালিত ৫-নং লটেই (লট-৫) অর্ধ লক্ষের বেশি ইউএস ডলার আয় করেছে এই প্রশিক্ষণার্থীরা। এই লটের আওতায় বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

গত ২৫শে নভেম্বর, ২০২০ শেরে বাংলা নগরস্থ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত পরিচিতি কার্ড বা ফ্রিল্যান্সিং আইডি কার্ড সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন, যা পরবর্তীতে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা ত্বরাণিত করতে সহায়তা দিবে। কর্মসংস্থান, উপার্জন বা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে এই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইটের মাধ্যমে (freelancers.gov.bd) দেশের ফ্রিল্যান্সিং সেবায় কর্মরতরা রেজিষ্ট্রেশন করে এই পরিচয়পত্র গ্রহণের সুযোগ পাবে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আজকে এই ফ্রিল্যান্সার আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটা ওয়েব পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যা থেকে সকল ফ্রিল্যান্সার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এতে ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক পরিচিতি তৈরির পাশপাশি ব্যাংক ঋণ পেতে পারবে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সহযোগিতা করতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটাও একটা কাজ। এটাও এক ধরনের চাকরি। কিন্তু সেটা হচ্ছে নিজেই নিজের বস এবং শুধু বস না, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া, অন্যের বস হওয়া।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফ্রিল্যান্সাররা যেন তাদের আইডি হতে ব্যাংকে তথ্য দিতে পারে এবং তখন ১০ শতাংশ ক্যাশ প্রণোদনা পায় সে দাবি রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এছাড়া দেশে পেপ্যাল আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সারা দেশে ৬৪টি জেলা ও ৪৯২টি উপজেলায় লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্তমান প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার তরুণ-তরুণীকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।