লালমনিরহাটে দিনমজুরকে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ


সংবাদদাতা, লালমনিরহাট প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩১, ২০২১, ৭:০৬ পূর্বাহ্ন / ১৩৭
লালমনিরহাটে দিনমজুরকে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ

লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ে গুরুতর আহত হওয়ায় কিস্তি দিতে পারেননি দিনমজুর একরামুল হক একরা’র স্ত্রী শিউলী বেগম।

এঘটনায় স্বামী একরাকে অফিসে ডেকে আনে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে হাতীবান্ধা উপজেলার এনজিও পপি’র ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের বিরুদ্ধে।

শনিবার (৩০ জানুয়ারী) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার মেডিকেল মোড়স্থ দইখাওয়া রোডের পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) এ ঘটনা ঘটে।

পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগ নেতা এসে তাকে উদ্ধার করে।

দিনমজুর একরামুল হক এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করবেন বলে জানান।

জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রাম এলাকার মৃত্যু সোলেমান গনির ছেলে দিনমজুর মোঃ একরামুল হক ওরফে একরা (৪৮)। আর্থিক অনাটনের কারনে গত ২৬ নভেম্বর স্থানীয় পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) এনজিও থেকে স্ত্রী শিউলী বেগমের নামে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সাপ্তাহিক দুটি কিস্তি দেয়ার পর একরামুলের মা গত ১২ ডিসেম্বর মারা যায় এবং হঠাৎ করে শফিপুরের গার্মেন্টস থেকে বাসা যাবার পথে ১৮ জানুয়ারী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় বড় মেয়ে শারমিন বেগম (২১)। মায়ের কুলখানি ও ঢাকায় গিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করার ফলে ২-৩ সপ্তাহ কিস্তি দিতে পারেনি একরামুল দম্পতি।

কিন্তু এনজিও পপি’র ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের কাছে একরামুল দম্পতির এ দুঃখের কোন মুল্য নেই। তারা শুধু কিস্তির টাকার জন্য তাদেরকে চাপ দিতে থাকে।

শনিবার (৩০ জানুয়ারী) সকাল ১০টার দিকে পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন একরামুলকে ফোন করে তার অফিসে ডেকে আনেন। একরামুল অফিসের সামনে আসা মাত্রই একরামুলকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢোকান এবং তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে পরিবারের লোকজনকে কিস্তির টাকা নিয়ে আসার জন্য একরামুলকে ফোন দিতে বলে ও মারধর করে বলে জানা যায়। আর কিস্তির টাকা দিতে না পারলে তাকে রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকতে হবে বলে জানায়।

একরামুল বিভিন্ন জনের কাছে ফোন দিয়েও টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনকে ১০-১২ ফেব্রুয়ারী মেয়ে বেতন পেলে কিস্তির সব টাকা পরিশোধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন কাজ হয়নি।

খবর পেয়ে একরামুলের পরিবার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী, ঐ ওয়ার্ডের আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে পপি অফিস থেকে একরামুলকে উদ্ধার করে তার পরিবার।

দিনমজুর একরামুল হক একরা বলেন, মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ের গুরুতর আহত হলে একটি মাস আমাকে অনেক ঝামেলার মধ্যে সময় পার করতে হয়। ফলে আমি ২-৩টা কিস্তি দিতে পারিনি। এজন্য পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন সকালে অফিসে ডেকে নিয়ে অনেক গালমন্দ করে এবং ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনায় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানান।

এবিষয়ে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী ও ঐ ওয়ার্ডের আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, একরামুলের মায়ের মৃত্যু ও মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় কারনে ২-১টা কিস্তি দিতে পারেনি। তাই বলে কিস্তির টাকা আদায় করার জন্য একরামুলকে অফিসে ডেকে তালাবদ্ধ করে রাখা ঠিক করেনি।

পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ঋণ নেবার পর একরামুলের ৪টা কিস্তি বাকি রয়েছে। এজন্য তাকে অফিসে ডাকা হয়েছে।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঐ পপি’র এরিয়া ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। এ বিষয়ে বিকালে বসে একটা সমাধান করা হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিউল আমিন বলেন, এবিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেননি, আপনার মুখেই শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।