লালমনিরহাটে সম্বলহীন এক স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার
সংবাদদাতা, লালমনিরহাট
প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২১, ৬:১৩ পূর্বাহ্ন /
৫১৮
রাস্তার উপর ধূ ধূ বালু, চারপাশে খা খা পরিবেশ। লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী’র, ওয়াপদার বাঁধ (পানি উন্নয়ন বোর্ড) রাস্তা ধরে সোনাতলা থেকে সোজা পূর্বদিকে চর বুদারু’র দিকে চলন্ত পথে। হঠাৎ চোখে পড়লো একটি সাইনবোর্ডের দিকে। সাইনবোর্ডটি দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হলো অবাক দৃষ্টিতে । বড় বড় অক্ষরে লেখাগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে পাশের কয়েকটি টিনের ১টি চালা, বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে ঘেরা ছোট ঘরটি দেখে যেন ঢেঁকুস আটকে গেলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাঁধ রাস্তার ধারে এই ঘরটিতে বসবাস করে একটি বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার!
এই কি সেই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার?
যাদের অজস্র ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিলো এই দেশে, আজ তারাই অবহেলিত, বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি পদে।
তেমনি এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার রয়েছে বড়বাড়ী ইউনিয়নের খেদাবাগ গ্রামে।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি খুব কষ্ট ও অবহেলায় অতিবাহিত করে আসছে তাদের জীবন। বড়-বড় অক্ষরে লেখা গুলো মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী (ভূমিহীন)।
জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী’র স্ত্রী মোছাঃ খচিরন বেওয়া (৭৫) জানান, আমার স্বামী ২০১৬ সালে মৃত্যু বরন করেন। ৫ ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে রাস্তার ধারে অসহায়ভাবে বসবাস করে আসছি। আমাদের কোন জমি জমা নেই। সরকার যাতে আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দেন ।
ছেলে আব্দুল খালেক (৫৫) কান্না কন্ঠে বলেন, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে আমাদের। খুব কষ্ট করে ৫ ভাই বোনদের মানুষ করেছি। শুনছি সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের বাড়ি করে দিচ্ছে আমাদের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে বেঁচে থাকতে পারি।
ছোট ছেলে বাবুল (৪০) বলেন, আমাদের মতো অভাবী আর দুটো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবেনা এই পুরো এলাকা জুড়ে। নিঃস্ব হয়ে ওয়াপদার বাঁধে এসে ঘর তুলে ৮-১০ বছর ধরে বসবাস করছি।
মেয়ে দুলালী বেগম বলেন, থাকার কোন স্থান নাই, কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে আমাদের । আর এদিকে তেমন কাজও নাই যে, ঠিক মতো কর্ম করে সংসার চালাতে পারবো।
বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ ইয়াসিন আলী মোল্লা বলেন, যারা তালিকা করেন তাদেরকে বহু আগ থেকে পরিবারটির বিষয়ে বলে আসছি। কিন্তু কেন যে, পরিবারটি মাথা গোচার ঠাঁই পাচ্ছে না তা আমি সঠিক জানি না। তবে, এই তালিকার সাথে আমার কোন হাত নেই। সাংবাদিকরা পরিবারটির খোঁজ খবর নিচ্ছেন জেনে আমারও ভালো লাগলো। আমিও চাই যে ঐ পরিবারটি যাতে মাথা গোচার ঠাঁই পায়।
আপনার মতামত লিখুন :