সন্তান আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত


জামান শামস প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৫, ২০২০, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন / ২১৫
সন্তান আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত

সন্তান আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তাকে গড়ে তোলা মা-বাবার প্রধান দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। এসব নিয়ামতের মধ্যে সুসন্তান অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?’ (সূরা নাহল-৭২)

শিশু মানব জাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিশুরা নিষ্পাপ, শিশু পবিত্রতার প্রতীক। শৈশবেই মানুষের জীবনের গতিপথ নির্ধারিত হয়। তাই ইসলাম শৈশবকালকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

প্রিয় নবী সা: বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুই স্বভাবধর্মে (ইসলামে) জন্মগ্রহণ করে।’ (তিরমিজি)
হজরত আবু রাফি রা: বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা:-কে দেখেছি, হজরত হাসান রা:-এর জন্ম হলে তিনি তার কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন।’ (তিরমিজি)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘হজরত হাসান রা:-এর জন্মের পর রাসূলুল্লাহ সা: তার ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দিয়েছিলেন।’ (বায়হাকি)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মত নয়।’ (আবু দাউদ ও তিরমিজি)
হজরত আনাস রা: বলেন, ‘এক গরিব মহিলা তার দুই কন্যাসন্তান নিয়ে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা:-এর কাছে এলে তিনি তাকে তিনটি খেজুর দিলেন। মহিলাটি তার দুই কন্যাকে দু’টি খেজুর দিলেন এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য মুখে তুলে নিচ্ছিলেন, এ সময় শিশুরা সেটি খেতে চাইলে মহিলা ওই খেজুরটি দুই ভাগ করে তাদের হাতে তুলে দিলেন। আয়েশা রা: বলেন, মহিলার এই কাজে আমি অভিভূত হলাম, তাই আমি ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সা:-কে বললাম।’ তিনি বললেন, ‘আয়েশা! আল্লাহ তায়ালা ওই মহিলাকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ (মুসলিম, রিয়াদুস সালিহিন) হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, ‘একবার এক ব্যক্তি একটি শিশুকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা:-এর দরবারে এলেন এবং শিশুটিকে চুমু দিলেন। রাসূলুল্লাহ সা: এ দৃশ্য দেখে বললেন, ‘শিশুটির প্রতি কি তোমার ভালোবাসার উদ্রেক হয়েছে? লোকটি বলল, জি হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমার প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়া করবেন।’ (আদাবুল মুফরাদ)
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: বলেন, ‘এক বেদুইন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর খেদমতে এসে বললেন, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমি তো কখনো শিশুদের চুমু দেই না। তিনি তাকে বললেন, আল্লাহ যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া ছিনিয়ে নেন, তবে আমার কি-ই বা করার আছে?’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, ‘একবার রাসূলুল্লাহ সা: হজরত হাসান রা:-কে চুমু দিলেন, তখন সেখানে আকরা ইবনে হাবিস রা: উপস্থিত ছিলেন। এ দেখে তিনি বললেন, আমার ১০টি সন্তান আছে, আমি কখনো তাদের চুমু দেইনি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সা: তার দিকে তাকিয়ে বললেন, যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’ (বুখারি ও মুসলিম, রিয়াদুস সালিহিন)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমরা তোমাদের শিশুদের সর্বপ্রথম কথা শেখাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নেই)।’ (বায়হাকি ও মুসতাদরাকে হাকিম)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। প্রতিটি মানুষ তার পরিবার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দায়িত্ববান; তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের ব্যাপারে দায়িত্ববান; সে এসবের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)
কাজেই মা-বাবার ওপর অনেক বড় জিম্মাদারি। আল্লাহপাক সতর্ক করেছেন, যদি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হও তাহলে মনে রেখোÑ আখিরাতের আদালতে এই সন্তানের তোমাদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করে তোমাদের শাস্তি কামনা করবে।
তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের মহা অভিসম্পাত করুন।’ (সূরা আহজাব : ৬৭-৬৮)

লেখক : সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড