সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ


সংবাদদাতা, সিরাজগঞ্জ প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১, ২০২১, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন / ৪৪১
সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ টি.এম সোহেলের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ তুলেছেন ওই কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এস.এম মনোয়ার হোসেন। পেনশন ফাইলের জন্য ঘুষ না দেয়ায় অবসর গ্রহণের প্রায় ১৩ মাস পার হলেও অবসরকালীন ভাতা (পেনশন) পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রবিবার (৩১ জানুয়ারী) সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন প্রফেসর এস.এম মনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে ওই কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রফেসর এস.এম মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অবসর প্রস্তুতিমূলক সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি নতুন দায়িত্ব নেয়া অধ্যক্ষ বরাবর না দাবি প্রত্যয়ন চেয়ে দরখাস্ত করেন। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের ৫ মার্চ তারিখে তার পিআরএল মঞ্জুর করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি অবসরে যান। এরপর ১ জুলাই বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পেনশন সংক্রান্ত ফাইল জমা দিতে গেলে তিনি নেননি। এরপর কয়েক দফায় পেনশন ফাইল জমা দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি নিজেও গ্রহণ করেননি এবং অফিসের অন্য কাউকেও গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। বাধ্য হয়ে তিনি ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর তারিখে ডাকযোগে পেনশন সংক্রান্ত ফাইল বর্তমান অধ্যক্ষ বরাবর পাঠান।

তিনি বরেন, তারপরও অধ্যক্ষ টি এম সোহেল কোন পদক্ষেপ নেননি। আড়াই মাস চলে যাবার পর ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে পেনশন ফাইল অগ্রায়নের জন্য ডাকযোগে অধ্যক্ষ বরাবর একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠি পাবার পর ১৯ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ টি এম সোহেল পেনশন আনুতোষিক নির্ধারণ ও মঞ্জুরীর ফাইলটি অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তাকে (এস.এম মনোয়ার হোসেন) পাল্টা চিঠি দেন। ২৪ ডিসেম্বর ওই চিঠিটির যুক্তিপূর্ণ জবাব দেন এস.এম মনোয়ার হোসেন। এরপর দীর্ঘ ৪-৫ মাস অতিবাহিত হলেও তার পেনশন ফাইলে কোন অগ্রগতি নেই। এভাবে দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পরও পেনশন ফাইলটি মাউশিতে প্রেরণ করেননি অধ্যক্ষ। বাধ্য হয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আইনজীবি অ্যাড. শহীদুল ইসলামকে দিয়ে উকিল নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাওয়ার পর ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পেনশনের ফাইলটি মাউশিতে পাঠান অধ্যক্ষ সোহেল। তবে ফাইলটি যাতে কোনক্রমে পাশ না হয় সে লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পাঠান। সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অডিটের ব্রডশিট জবাব সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত করা হয়নি।

এরপর মাউশির চাহিদার প্রেক্ষিতে অডিটের ১ বছর ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্রডশিট জবাব পাঠিয়ে দেন তিনি। সেখানে অনুচ্ছেদ ৩ পরিশিষ্ট ১ এর জবাবের প্রকৃত তথ্য উপাত্ত থাকা সত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টাকার পার্থক্য দেখিয়ে জবাব দিয়েছেন।

প্রফেসর মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় অধ্যক্ষ এমনটা করছেন। নিজের আস্থাভাজন শিক্ষককে দিয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার কাছে ঘুষের প্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ সোহেল।

এ বিষয়ে সাবেক উপাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভ্যন্তরীণ অডিট চলাকালীন সময়ে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রভাত চন্দ্র বিশ্বাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ তার কাছে প্রফেসর মনোয়ার স্যারের পেনশন ও অডিট নিস্পত্তি করতে ৩০/৩২ লাখ টাকা অধ্যক্ষের টেবিলে রাখতে বলেছিলেন।

এদিকে ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ টি. এম সোহেল বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যথাযথ নিয়মেই প্রফেসর মনোয়ার হোসেনের পেনশন সংক্রান্ত ফাইল মাউশিতে পাঠিয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি।