৩৬ বছর পর স্বজনদের খুঁজে পেলেন হাসিনা


সংবাদদাতা, নাটোর প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩১, ২০২১, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন / ৩৮৮
৩৬ বছর পর স্বজনদের খুঁজে পেলেন হাসিনা

মাত্র ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যান হাসিনা খাতুন (৪৬)। হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে ফিরে পেয়েছেন তার স্বজনদের।

শনিবার (৩০ জানুয়ারী) তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার রয়না গ্রামে তার বাবা মৃত মখলেছুর রহমানের বাড়িতে ফিরে এলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যেই হাসিনার বাবা মখলেছুর রহমান ও সৎমা দুজনেই মারা গেছেন। রয়েছে শুধু তার ছোট দুই বোন আর বাড়িসংলগ্ন মামি ও মামাতো ভাইবোনেরা।  শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে ফিরে এলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসিনা ও তার স্বজনরা। বাবা-মা বেঁচে না থাকলেও তাদের স্মৃতি আর বেঁচে থাকা স্বজনদের বুকে জড়িয়ে দীর্ঘ তিন যুগ পর নতুন করে বাঁচার অবলম্বন পেলেন হাসিনা খাতুন। খবর পেয়ে তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান অনেকে।

স্বজনরা জানান, ছোট বেলায় হাসিনার স্মৃতিশক্তি একটু দুর্বল ছিল, কোনো কিছু ঠিকঠাক মনে রাখতে পারতেন না। প্রায় ৩৬ বছর আগে একদিন হাসিনা প্রতিবেশী এক নানির সঙ্গে বনপাড়া বাজারে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

ওই ঘটনার ব্যাপারে হাসিনা খাতুন জানান, বাজার থেকে বাড়ি ফেরার জন্য একাই বাসে উঠেন। কিন্তু ভুল বাসে ওঠায় তিনি চলে যান ঈশ্বরদী। সেখান থেকে যান ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে। কিন্তু ফিরবেন কীভাবে বুঝতে না পেরে বসে বসে কাঁদছিলেন। এ সময় আলমগীর হোসেন নামে রেলওয়ের একজন টিটি তাকে দেখতে পেয়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।

দীর্ঘ দিনেও তার পরিচয় জানতে না পেরে হাসিনার আশ্রয় মেলে আলমগীরের দুলাভাই কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার কলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে। এরপর তারাই লালনপালন করে গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরেও কোনো সন্তান না হওয়ায় এক পর্যায়ে ভেঙে যায় তার সংসার। এরপর হাসিনার পুনরায় বিয়ে হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ভাদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কুষ্টিয়া চিনিকলের পাওয়ার টারবাইন অপারেটর হিসাবে কর্মরত আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে।

হাসিনা খাতুনের সঙ্গে আসা সোহেল রানা জানান, হাসিনার বর্তমান স্বামী সম্পর্কে তার দুলাভাই। বিয়ের পর তিনি প্রায়ই বাবা-মাকে দেখতে চাইতেন। কিন্তু ঠিকানা বলতে পারতেন না। তবে বাড়ি লক্ষীকোল, বাবার নাম মখলেছ আর বাড়ির পাশে বড়াল নদী আছে শুধু এতটুকুই বলতে পারতেন। গত তিন বছরে এটুকু তথ্যের ভিত্তিতেই সোহেল রানা ও তার দুলাভাই হাসিনার স্বজনদের খুঁজে পেতে নাটোরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন। কিন্তু খোঁজ পাননি। অবশেষে গত ১৫ দিন আগে তারা বড়াইগ্রাম পৌরসভার লক্ষীকোলের পাশে রয়না গ্রামে এসে খুঁজে পান তাদের ঠিকানা। এরপর তারা হাসিনাকে নিয়ে আসেন স্বজনদের কাছে।

হাসিনার মামাতো ভাই আমজাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় আমরা বোনকে এক প্রকার ভুলতেই বসেছিলাম, আর কোনদিন তাকে পাবো এমন আশা ছিলো না। কিন্তু অবশেষে তাকে পেয়ে আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করছি।

হাসিনা খাতুন বলেন, সব সময়েই বাবা-মাসহ স্বজনদের দেখতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা সঠিকভাবে বলতে না পারায় শুধু নীরবে কেঁদেছি। স্বামীর চেষ্টায় অন্তত তাদের মুখ দেখতে পেরেছি। এতেই আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়েছে। এখন এটুকু ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে, পৃথিবীতে আমারও আপন বলে কেউ আছে।