নাটোরের গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে কলেজটির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে। অশোভন আচরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কলেজের ছাত্রীরা।বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে পিয়ন শাহাদত হোসেন কলেজে প্রবেশ করলে ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ছাত্রীদের রোষানলে পড়ে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ফেলেই দৌড়ে পালিয়ে যান পিয়ন শাহাদত। তার মোটরসাইকেলটি তালাবদ্ধ করে রাখেন ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। পরে কলেজের অধ্যক্ষের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, পিয়ন শাহাদত হোসেন কলেজে দায়িত্ব পালনের পাশপাশী নৈশপ্রহরী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে। দায়িত্ব পালনের সময় কলেজের আবাসিক এক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। বিষয়টি নিয়ে অন্য ছাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ থেকে পিয়ন শাহাদতের অপসারণ দাবি করে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করি আমরা। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমাদের শিক্ষক মায়ারানী চক্রবর্তীকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, পিয়ন শাহাদত একজন আবাসিক ছাত্রীর সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়ানোর পরও অন্য ছাত্রীদের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করে। অথচ, এতো অভিযোগের পরও অধ্যক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ছাত্রীদের গণস্বাক্ষর নিয়ে পিয়ন শাহাদতের অপসারণ দাবি করি আমরা। গণস্বাক্ষরসহ একটি অভিযোগের কপি অধ্যক্ষ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।তদন্ত কমিটির প্রধান মায়ারানী চক্রবর্তী বলেন, তদন্তে পিয়ন শাহাদতের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া, এক ছাত্রীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে তার স্ত্রীও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। স্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই পিয়নকে দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেনি ওই পিয়ন। এ কারণে, তাকে ২২ দিনে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। একজন পিয়নের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলেও অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে, কেনো বা কী কারণে অধ্যক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে শিক্ষক ও ছাত্রীদের মাঝে।এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বলেন, নানা ব্যস্ততার কারণে অভিযোগটি আমলে নিতে বিলম্ব হচ্ছে।
তবে, পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, এক ছাত্রীর সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলা ও অন্য ছাত্রীদের সাথে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে পিয়ন শাহাদত হোসেন বলেন, কলেজের কতিপয় শিক্ষক ব্যক্তিগত ক্ষোভের জেরে আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ আনছেন।ছাত্রীদের তাড়া খেয়ে কলেজ থেকে পালানোর ব্যাপারে শাহাদত জানান, ছাত্রীদের হৈচৈ দেখে আমি মোটর সাইকেল রেখেই কলেজ থেকে চলে এসেছি।কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানান, কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :