ঠাকুরগাঁওয়ে ঘরে বসেই নারীরা হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা


সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২১, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন / ৫৯৪
ঠাকুরগাঁওয়ে ঘরে বসেই নারীরা হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা

ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ঘরে বসেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন নারীরা। এখন দেশে প্রায় ২০ হাজার ফেসবুক পেজে কেনাকাটা চলছে। এর মধ্যে ১২ হাজার পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। সেই হিসাব ঠাকুরগাঁওয়েও কম নয়।

ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার এমনি একটি অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম।

এর যাত্রা শুরু হয় ১৪ মে ২০২০ সালে। মাত্র ৮ মাসেই এই অনলাইন গ্রুপটি থেকে তৈরি হয়েছে শতাধিক নারী উদ্যোক্তা। গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা এখন ২৩ হাজারের বেশি।এর মধ্যে প্রায় তিন’শ জনের অধিক বিক্রেতা এবং বাকী সবাই ক্রেতা। গ্রুপ পরিচালনা করছেন ছয়জন নারী।

গ্রুপ এডমিন সানজিদা শারমিন সেতু। তার সহযোগী হিসেবে আছেন ৫ জন মডারেটর মারিয়া মিতু, মায়িশা শারমিন মিম, শাবনাজ শান্তা, অপর্না আক্তার মিমু এবং ফারিহা ওয়াদুদ।

এডমিন সানজিদা শারমিন সেতু জানান, নারীরা ঘরে বসে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে যাতে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারেন সে লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

শুক্রবার গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় সকল উদ্যোক্তাদের নিয়ে ‘উদ্যোক্তা আসর।

ক্ষুদ্র পরিসরে দুই শতাধিক নারী ঘরে বসে নেমেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। এখানে নারী উদ্যোক্তাদের কেউ পোশাক, কেউ গয়না, কেউ হাতে তৈরি পাটের  জিনিস, কেউ তৈরি খাবারসহ নানা পণ্য বিক্রি করছেন। অনেকে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কাজ করছেন। কেউ শৌখিন পণ্যকে নিয়ে ব্যবসায় নেমেছেন। এই নারীরা শিক্ষিত। শুধু নারীরাই নয়, এখানে যোগ হয়েছেন অনেক শিক্ষিত যুবকও।

অনুষ্ঠানে কিছু সংখ্যক স্টলের আয়োজন করা হয়েছিলো যাতে করে উদ্যোক্তারা নিজেদের পন্যের প্রচার করতে পারেন।

অনলাইন গয়না বিক্রেতা রোজি আক্তার বলেন, শারীরিক অসুস্থতায় স্বামী ঘরে বসা।তাই নিজে কিছু করার ইচ্ছা ছিলো দীর্ঘদিনের।একসময় যুক্ত হই ঠাকুরগাঁও অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার গ্রুপে। শুরু করি অনলাইন ব্যবসা। গ্রুপের মাধ্যমে খুব অল্পদিনেই অনেক পরিচিতি লাভ করি। ধন্যবাদ জানাই গ্রুপের এডমিন মডারেটরদের যাদের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও এর নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারছি।

নারী উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও এর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজন করা হয় নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পবলা, তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা বিষয়ক আলোচনা সভা।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের সহকারি প্রফেসর নাসরিন জাহান আইভি।

বক্তব্য দেন গ্রুপের সফল উদ্যোক্তা লাভলী বিউটি পার্লারের পরিচালিকা লাভলী আক্তার, আল হাসানাহ স্কুলের পরিচালক ইত্তাশাম উল হক মিম, পিক্সেল আইটির পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বিয়ে বাজার এর সাইয়্যেদাতুন টুম্পা এবং এ্যাপটাচ কম্পিউটার এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।

শেষে গ্রুপের মাধ্যমে সফল ব্যবসায়ী তিনজন নারী উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা দেওয়া হয়।

তারা হলেন, সুইট গিফটের তামান্না মিমি, আস্থা কালেকশনের উম্মে কুলসুম রানি এবং আমার রান্নাঘরের প্রিয়াংকা দাস।

এছাড়াও সকল উদ্যোক্তাদের সৌজন্য পুরষ্কারের আয়োজন করা হয়েছিলো।

কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, অল্প কিছু জমানো টাকা দিয়ে মেয়েদের পোশাক কিনে ফেসবুক পেজ খুলে ব্যবসা শুরু করি। প্রথম দিকে কেউই তেমন সাহস দেয়নি। তবে গ্রুপ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা পেয়েছি।ধীরে ধীরে সফলতার মুখ দেখতে পাই। অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা খুব চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ। তবে এ কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে এই গ্রুপের জন্য।

তিনি বলেন, অনলাইনে বিজনেসের প্রথম শর্তই হলো ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়া, পণ্যের মান, সঠিক মূল্য উপস্থাপন করা এবং নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়া।আমি সবসময় গ্রুপে পোস্ট কমেন্টের মাধ্যমে একটিভ থাকি।যাতে করে সকলে আমাকে চিনে। কথায় আছে যাকে চিনি তার পন্য কিনি।
গ্রুপের এডমিন প্যানেল খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন গ্রুপের মাধ্যমে যাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হতে পারে।সেই সাথে গ্রুপের এডমিন প্যানেল তাদের নিজস্ব অনলাইন বিজনেস পরিচালনা করছেন।

“সাশ্রয়ী মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, সকল পন্য মাত্র ৪৯ টাকা থেকে ৪৯৯ টাকায় পাওয়া যায়।

গ্রুপের এডমিন জানায় “খুব অল্প পরিসরে প্রথম বারের মত উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজন করেছি। আগামীতে ইনশাআল্লাহ বড় করে মেলার আয়োজন করা হবে যাতে অনলাইন উদ্যোক্তারা নিজেদের পন্য সকলের কাছে তুলে ধরতে পারেন।সেই সাথে ঠাকুরগাঁও এর মানুষের মনে অনলাইন কেনাকাটার ভীতি দূর করতে পারি। তারা যেন হাতের কাছেই স্বল্পমূল্যে মানসম্মত পন্য পায় সে লক্ষ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সে জন্য সকলের সহযোগিতা কাম্য।