মোর দশ কাঠা জমিতে পাতা কপির আবাদ করিচো, এই পাতা কপি আর কেউ নেওচেনা, বাজারোত ভ্যানোত করে নিয়ে যাওয়া সেই ভ্যান ভাড়া মোক বাড়িত থেকে দিবা নাকোচে, তাই মুই জমির সব পাতা কপি গরুক খাওয়াচো, মোর মনের ভিতোর হা-হা-কার করোচে। এমন কথা বলেন বিরামপুরের মাহমুদপুর মুন্সীপাড়া গ্রামের হাছেনা বেগম।
বিরামপুরের মাহমুদপুর সবজির মাঠে কথা হয় কলেজ ছাত্র সরোয়ার জাহানের সাথে। সে বলে পড়াশুনার পাশাপাশি বাবার জমিতে ফুল কপি চাষ করতেছি লাভের আশায় কিন্তু প্রতিটি ফুল কপিতে সব মিলে ৫ থেকে ৬ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বাজারে ২ থেকে ৩ টাকা দাম বলছে তারপরও ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে।
উপজেলার মাহমুদপুর মুন্সী পাড়া গ্রামের এই ফুলকপি চাষি কলেজ ছাত্র আরও বলেন, তার এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে গিয়ে সার, সেচ, শ্রমিকদের মজুরি, কীটনাশকসহ সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১৭৬৯০ টাকা। একটি ফুল কপি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ৬ টাকা কিন্তু এখন সেই ফুল কপি বাজারে বিক্রি দুই টাকাতেও কেই নিতে চাচ্ছে না।
দক্ষিণ লক্ষিপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেন বলেন, এই পাতা কপি চাষ করে খুবই বিপদে পড়েছি। এছাড়াও বেগুন ও আলুর দাম খুবই কম, তিন শত টাকা আলুর মন কি করে সম্ভব খরচ তোলা। প্রতিবার সবজি চাষ করে কিছু না কিছু লাভ হতো এবার আমাদের মাথায় হাত। ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে কি ভাবে চলবো।
একই এলাকার সবজি চাষি মোকছেদ হোসেন বলেন, এবার সবজি আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
তিনি জানান, স্থানীয় বাজারে চাহিদা না-থাকায় তাদের বাধ্য হয়েই বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে অনেকে এই সবজি গুলো বাড়িতে গরুকে খাইয়ে দিচ্ছেন। শুধু হাছেনা, সারোয়ার, মনোয়ার ও মোকছেদ হোসেনই নন, বাজারের দাম না-থাকায় বিরামপুর এলাকার অনেক সবজি চাষিকে গুনতে হচ্ছে লোকসান।
বিরামপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিকছন চন্দ্র পাল বাজারে সবজির দাম না-থাকায় কৃষকদের লোকসানের কথা স্বীকার করে জানান, প্রথম আবস্থায় সবজির দাম বেশ চড়া ছিল। তাই প্রথমে যারা বিক্রি করতে পেরেছে তারা বেশ লাভবান হয়েছেন। কিন্তু এবার বিরামপুরে প্রচুর পরিমানে সবজি চাষ হওয়াই ভরা মৌসুমে চাষিরা সঠিক দাম পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, বিরামপুর উজেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার দুই শত হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :