আজ ভাষাসৈনিক দবিরুল ইসলামের মৃত্যু দিবস


মিজানুর রহমান, ঠাকুরগাঁও প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৩, ২০২১, ৬:১৯ পূর্বাহ্ন / ৬৩৯
আজ ভাষাসৈনিক দবিরুল ইসলামের মৃত্যু দিবস
১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের এক সাহসী নাম দবিরুল ইসলাম।  ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে যার ছিল সত্রিয় অংশগ্রহণ।  তৎকালীন সময়ে অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তরুণ ছাত্রনেতা দবিরুলের খ্যাতি ছিল চারদিকে।
আজ ১৩ জানুয়ারি, ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ভাষাসৈনিক, উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান মুহম্মদ দবিরুল ইসলামের মৃত্যু দিবস।  তিনি বৃহত্তর দিনাজপুরের তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার বামুনিয়া গ্রামে ১৯২২ সালে ১৩ মার্চ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠনে যে কজন তরুণ ছাত্রনেতা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে দবিরুল ইসলাম অন্যতম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা পর্বে যে ক’জন সাহসী সূর্য সন্তান তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল দবিরুল ইসলাম ছিলেন সেই সাহসী, স্বপ্ন সারথিদের অন্যতম।
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের নায্য আন্দোলন, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন, যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন এ সবের পিছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন ছাত্রনেতা দবিরুল ইসলাম। ছাত্রবস্থাতেই তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখা শুরু করেন। লাহিড়ী এম.ই হাই স্কুল থেকে বিভাগীয় বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাজশাহী বিভাগীয় ‘মায়াদেবী উম্মুক্ত রচনা প্রতিযোগীতায়’ লাভ করেন স্বর্ণ পদক। এরপর ১৯৩৮ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজে। এখান থেকে আই.এ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান নিয়ে বোর্ড স্ট্যান্ড করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।
১৯৪৭ সালে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে বিএ পাশের পর আইন বিভাগে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই দিনাজপুরে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান দবিরুল ইসলাম। তাই ১৯৪৬ সালে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মী সম্মেলনে ডাক পড়ে তার।সেই সম্মেলনে দবিরুল ইসলামের সঙ্গে আরও যোগ দেন মুস্তফা-নুর-উল ইসলাম, এম আর আখতার মুকুল, আব্দুর রহমান চৌধুরী, রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।
১৯৪৮ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম আহবায়ক কমিটি গঠিত হলে আহ্বায়ক হন রাজশাহীর নঈমুদ্দিন আহম্মেদ। নবগঠিত এই কমিটিতে ফরিদপুর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান, কুমিল্লা থেকে অলি আহাদ এবং দিনাজপুর থেকে দবিরুল ইসলাম সহ মোট ১৪ জন প্রতিনিধি অর্ন্তভূক্ত হন। কমিটির নেতাদের অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা, মেধা আর পরিশ্রম পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ গঠনের প্রক্রিয়াকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নেয়। চলতে থাকে পাকিস্তান বিরোধী ও রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার দূর্বার আন্দোলন। সারা দেশের মতো দিনাজপুরেও ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলনের উত্তাপ। তখন দিনাজপুরে দবিরুল ইসলাম, নুরুল হুদা, কাদের বক্স (ছোটি ভাই), এম আর আখতার মুকুলসহ অনেকেই ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ আন্দোলন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। এরই মাঝে দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজের (বর্তমানে সরকারি মহিলা কলেজ) এক ছাত্র-জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে গ্রেফতার হন দবিরুল ইসলাম। দিনাজপুর জেলখানায় তাকে অমানুষিক নির্যাতন, জুলুম ও মারপিট করা হয়। বেয়নেট দিয়ে তার বুকে আঘাত করা হয়।
ব্যাপক নির্যাতন-অত্যাচারে দবিরুলের স্বাস্থ্য চিরতরে ভেঙ্গে যায়। বঙ্গবন্ধুসহ বেশ কয়েকজন নেতা দবিরুল ইসলাম ও অন্যান্য ছাত্রনেতাদের প্রতি এরকম নির্যাতনের খবর শুনে দিনাজপুরে ছুটে যান। যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে উল্লেখ করেছেন।
ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ায় কিছুদিন পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর রোষানলে পড়েন তিনি। আবার তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয় পাকিস্তান সরকার।  এরই মধ্যে ১৯৫৬ সালে আবু হোসেন সরকার নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় স্থান করে নেন দবিরুল ইসলাম।
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম আন্দোলনের এ অগ্রসৈনিক, বিরল প্রতিভার অধিকারী মুহম্মদ দবিরুল ইসলাম ১৯৬১ সালের ১৩ জানুয়ারি মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তার নিজ গ্রাম বামুনিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

ফিচার বিভাগের আরো খবর

আরও খবর